মো. আব্দুল কাদের
‘সুন্দর পৃথিবী গড়তে হলে, আগে নিজেকে গড়ো।’ বাংলাদেশের জাতীয় যুব নীতিমালা অনুযায়ী (১৮ -৩৫) বছর বয়সী সকলেই যুব। আমাদের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ যুব। সংখ্যার হিসাবে যার পরিমান ৪ কোটির অধিক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের এই বিপুল জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ বেকার। এবং এটাও সত্য যে, এই বিপুল জনগোষ্ঠীর একটা অংশ আধা দক্ষ, অদক্ষ। সামান্য অংশ দক্ষ। কিন্তু উন্নয়নের জন্য প্রায়োজন দক্ষ জনগোষ্ঠী। আমাদের দেশে ছাত্র জীবন শেষে একজন ছাত্র কিভাবে তার ক্যারিয়ার নির্বাচন করবে তা নিয়ে সে দ্বিধা দ্ব›েদ্ব ভোগে। কারণ আমাদের শিক্ষার সঙ্গে ক্যারিয়ার নির্বাচনের কোন সঙ্গতি নেই। আমি এখন আলোচনা করবো ক্যারিয়ার নির্বাচনে কোন কোন বিষয় বিবেচনায় আনা প্রায়োজন। জীবন বাঁচানোর জন্য জীবিকা হিসাবে মানুষ কোন না কোন কাজ করে থাকে। এই কাজ করার মাধ্যমেই মানুষ কোন একটি বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে জীবিকার পথ হিসেবে তা বেছে নেয়। জীবিকার পথ হিসেবে মানুষ যে পন্থাকে বেছে নেয় তাই মূলত তার ক্যারিয়ার, যেমন- একজন ডাক্তার তার জীবিকা হিসেবে ডাক্তারি করে থাকেন। এখানে ডাক্তারি করাটাকে তিনি ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছেন। আর এজন্য তিনি কোন হাসপাতালে কাজ করেন। সুতরাং আরেকটি বিষয় এখানে চলে আসে যে, কাজ করা আর ক্যারিয়ার এ দুটি বিষয় পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত হলেও একই বিষয় নয়। মূলত মানুষ তার ক্যারিয়ার ঠিক করতে বা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে।
আরও একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়- একজন ছাত্র কোন একটি সাধারণ বিষয়ে গ্রাজুয়েশন বা স্নাতক করার পর হয়ত কোন প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং বিভাগে চাকরি নিলেন। কিন্তু এ সময়ে তার ক্যারিয়ারকে মার্কেটিং বলাটা ঠিক হবে না। কারণ এক বছর পর তিনি হয়তো অন্য একটি কোম্পানিতে সেলস বা বিক্রয় বিভাগে অথবা হিসাবরক্ষণ বিভাগে চাকরি নিলেন। এভাবে কয়েক বছর কাজ করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে তিনি কোন বিভাগে নিজেকে দক্ষ করবেন এবং পরবর্তীকালে সে বিষয়েই নিজের ক্যারিয়ার তৈরী করবেন বা সে বিষয়েই উচ্চপদ গ্রহণ করবেন। এ সময়ে তিনি তার ক্যারিয়ারের একটি প্রথম এবং প্রধান ধাপ অতিক্রম করবেন। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, ক্যারিয়ারের জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করতে হয়। এ অবস্থায় পরবর্তীকালে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোন পন্থা বা বিষয়কে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়া যেতে পারে।
এ সিদ্ধান্ত নেয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। একজন ব্যক্তি যত শুরু থেকে তার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে পারবেন তিনি তত তাড়াতাড়ি সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। ক্যারিয়ার পরিকল্পনার জন্য যে বিষয়টি দরকার তা হলো, সাফল্য সম্পর্কে ধারণা থাকা।
ক্যারিয়ারের শুরু নিয়ে অনেকেই অনেক ভেবে থাকেন। আবার অনেকে কিছুই ভাবেন না। কর্মজীবনে প্রবেশের আগে সবচেয়ে বড় যে সমস্যায় পড়তে হয়, তা হলো সিদ্ধান্তহীনতা। কোন পথে ক্যারিয়ার শুরু করবেন বা কোন পথটি আপনার মনের মতো ইত্যাদি বুঝে উঠতেই বড় একটা সময় ব্যয় হয়ে যায়। অথচ যে সময় নষ্ট হয় তা আর ফিরবে না। এখানে সময় নষ্ট না করে আপনি কিভাবে সঠিক পথটি বেছে নেবেন, তার জন্য কিছু পরামর্শ দেয়া হলো। বিষয়গুলো মেনে চললে কর্মজীবনে আপনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন না।
ক্যারিয়ার পরিকল্পনা
এ প্রশ্ন আপনার মনের মধ্যে আসতেই পারে যে, ক্যারিয়ার পরিকল্পনা বলতে আসলে কী বুঝায়। সহজভাবে বলতে গেলে ক্যারিয়ার নিয়ে পরিকল্পনা হলো নিজেকে জানা, নিজের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানা এবং কোন পেশায় স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যায়, সেটি খুঁজে বের করে সেভাবে কাজ করা। এর পাশাপাশি নিয়মিতভাবে নতুন কিছু শেখা আর সে অনুপাতে পেশাগত জীবনে পরিবর্তন আনাও ক্যারিয়ার পরিকল্পনারই অংশ বিশেষ।
ক্যারিয়ার পরিকল্পনা মূলত কয়েকটি বিষয়ের সমন্বয় সাধন। প্রথমত, নিজের আগ্রহ, দক্ষতা এবং পছন্দের জায়গাগুলো খুঁজে বের করা। দ্বিতীয়ত, কাজ করা এবং শেখার যেসব সুযোগ রয়েছে, সেগুলো খুঁজে বের করা। তৃতীয়ত, যে কাজটি করছেন, সেটি যেন আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই হয়। আর চতুর্থত নিয়মিতভাবে নিজের কাজের মূল্যায়ন করা এবং সেভাবে নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সফলতা লাভের জন্য নিজের মেধা, মনন, চিন্তা চেতনা দিয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা, এক কথায় নিজেকে উৎসর্গ করা।
লক্ষ্য ঠিক করার জন্য ঝ গ অ জ ঞ টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে তার ব্যাখ্যা দেয়া হল:
ঝ= ঝঢ়বপরভরপ বা সুনির্দিষ্ট
গ = গবধংঁৎধনষব বা পরিমাপযোগ্য
অ = অপযরবাধনষব বা অর্জনযোগ্য
জ = জবধষরংঃরপ বা বাস্তবধর্মী
ঞ = ঞরসবভৎধসব সময়কাঠামো
সফল ক্যারিয়ার পরিকল্পনা
ক্যারিয়ার নিয়ে পরিকল্পনা বা ক্যারিয়ার ভাবনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চারটি ধাপ মেনে একটি সফল ক্যারিয়ার গঠন করা সম্ভব।
নিজেকে জানা
একটি সফল ক্যারিয়ারের মূল শর্ত হলো নিজেকে জানা, নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে জানা। কোন কাজটি করতে ভালো লাগে, কোন কাজে দক্ষ, এ সকল বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। ক্যারিয়ার পরিকল্পনার একেবারে শুরুতেই ঠিক করতে হবে আপনি কোথা থেকে শুরু করতে চান। আর এই বিষয়টি নির্ভর করছে আপনি এখন কোথায় আছেন, আপনি নিজেকে কোথায় নিয়ে যেতে চান এবং আপনি কীভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান তার উপর। এরপর নিজের আগ্রহ এবং কোন কাজে ভালো দক্ষতা আছে, সেগুলো জানতে হবে। যদি কারো কণ্ঠে সুর না থাকে তার দ্বারা যেমন ভারো গায়ক হওয়া সম্ভব নয়, তেমনি যে ঝুঁকি নিতে ভয় পায় তার দ্বারা উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হওয়া সম্ভব নয়।
সম্ভাবনার সন্ধান
এই ধাপে আপনার কাজ হলো বিভিন্ন ধরণের পেশা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা এবং সেগুলো সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া। যে সকল পেশা সম্পর্কে আপনার আগ্রহ রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারেও বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে নিন। প্রতিদিন আপনাকে কী ধরণের কাজ করতে হবে, কাজের পরিবেশ কেমন, কী ধরণের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রয়োজন, এই কাজের মাধ্যমে নিজেকে ভবিষ্যতে কোন অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব এসব কিছুই জেনে নিন। এর পাশাপাশি এখান থেকে আপনি কী শিখতে পারবেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য, সেটাও জেনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন এমনকি পিতা মাতার সঙ্গে ধারণা শেয়ার করতে পারেন। কারণ এক্ষেত্রে আপনার সিনিয়ররা আপনার থেকে বেশি অভিজ্ঞ। কাজেই তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে এই ধাপে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রায়োজন নেই।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ
বিভিন্ন পেশা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর এবার আপনার লক্ষ্য নির্ধারণের পালা। বিভিন্ন ধরণের পেশার মধ্য থেকে যে পেশাটি আপনার আগ্রহ, যোগ্যতা, দক্ষতা সবকিছুর সাথে মিলে যায়, সে পেশাটিই আপনার বেছে নেওয়া উচিত। তবে এক্ষেত্রে আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা তা হলো লেখাপড়ার সংগে পরবর্তী জীবনে পেশার কোন সামঞ্জ্যতা নাই। কেউ বাংলা সাহিত্যে পড়ে ব্যাংকে চাকুরী করছে আবার কেউ একাউন্টিং এ পড়ে ব্যাংকে চাকুরী করছে।
কাজে নেমে পড়া
ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে গেলে এবার আপনার কাজ শুরু করার পালা। এই ধাপে রয়েছে ক্যারিয়ারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ, যোগ্যতা অর্জন প্রভৃতি বিষয়। পেশা পরিকল্পনা যাই হোক আর যতদিনের জন্যই হোক না কেন পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হতে হবে। পরিকল্পনা করার সময় কিছু বিষয় সবসময় মাথায় রাখতে হবে- সাধারণ জ্ঞান, নিজ বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান, আত্মপ্রত্যয়, বুদ্ধিমত্তা, কাজ করার দক্ষতা, নেতৃত্ব, ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার দক্ষতা, সৃজনশীলতা, আত্মবিশ্বাস, যথাযথ বাচনভঙ্গি ও অন্যের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থাকা।
উপরিউক্ত গুণাবলী যারা অর্জন করেছেন তারাই সাফল্য লাভ করে থাকেন।
এই গুণগুরো জন্মসূত্রে না থাকলেও কাজের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব।
ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এবং সাফল্যের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সময় ব্যবস্থাপনা। আপনাকে অবশ্যই সময় ব্যবস্থাপনা জানতে হবে। এর জন্য যা করতে হবে-
আপনার প্রতিদিনের কাজগুলো লিপিবদ্ধ করুন
প্রতিটি কাজে এখন আপনি গড়ে কত সময় ব্যয় করছেন তা নিরূপণ/ঠিক করুন
প্রতিটি কাজে গড়ে কতটুকু সময় প্রয়োজন তা বের করুন
প্রতিটি কাজে গড়ে আপনি কতটুকু সময় অতিরিক্ত ব্যয় করেন তা বের করুন
এখন সিদ্ধান্ত নিন কীভাবে আপনি আপনার সময় ব্যয় করবেন?
সময় ব্যবস্থাপনা আপনার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে পারে, যদি আপনি সঠিকভাবে তা প্রয়োগ করতে পারেন। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে আগামীকাল আপনার করণীয় কাজগুলো একটি কাগজে লিপিবদ্ধ করুন এবং তারপাশে কোন সময়ে তা করবেন তা লিখুন। আপনার হাতের অতিরিক্ত সময় অন্য কোন প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করুন।
ক্যারিয়ার পরিকল্পনার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কাজের চাপের ব্যবস্থাপনা। আমাদের দেশে এ বিষয়টিকে খুব কম গুরুত্ব দেয়া হয়। আপনি যদি চাপ কমাতে না পারেন, তবে তা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা অনেক নেতিবাচক পরিবেশের মধ্যে বড় হচ্ছি, এর ফলে কাজের চাপ ব্যবস্থাপনা আমাদের জন্য খুবই প্রায়োজনীয়। চাপ কমানো ও ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের যা করতে হবে:
নিজের উপর বিশ্বাস রাখা, নেতিবাচক লোকদের এড়িয়ে চলা, সবকিছু সহজে গ্রহণ করা, মাথা ঠাÐা রাখা, সব সময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা, নেতিবাচক বিষয়কে ইতিবাচকভাবে দেখা, মেডিটেশন অনেক সময় আমাদের চাপ কমাতে পারে, তাই মেডিটেশন করা যেতে পারে। বাংলাদেশে এখন এর ব্যাপক চর্চা হচ্ছে।
উপরিউক্ত বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগী হলে আপনি সহজেই আপনার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে পারবেন। কারণ ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এর জন্য আপনাকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি অন্য কারো কাছ থেকে উপদেশ নিলেও নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবেন। কখনো অন্য কারো সিদ্ধান্ত যেন-আপনার ওপর চাপিয়ে না দেয়া হয়।
একটি ভাল ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই দক্ষতার উন্নয়ন প্রায়োজন। কিন্ত দক্ষতার বিষয়টি অনেক ব্যাপক এবং একটি দক্ষতাস অন্য দক্ষতার উপর নির্ভরশীল। আপনি শুধু একটি বা দুইটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলে সাফল্য লাভ করবেন, এটা মনে করা ঠিক না। সাফল্য লাভ করার জন্য যত বেশী দক্ষতা অর্জন করা যায় ততই একটি সুন্দর ও সফল ক্যারিয়ার এর দিকে আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন।
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কোন কোন দক্ষতা অবশ্যই উন্নয়ন করা প্রয়োজন। যে দক্ষতাগুলো অবশ্যই উন্নয়ন করতে হবে তা হল-
আইটি, কমিউনিকেশন, ব্যবস্থাপনা,
কমিউনিকেশন দক্ষতা: আপনি কিভাবে অন্য একজন ব্যক্তির কাছে সুন্দরভাবে আপনাকে উপস্থাপনা করতে পারছেন, তাই হল আপনার কমিউনিকেশন দক্ষতা। অর্থাৎ আপনার কথা-বার্তা, আচার-ব্যবহার এর মাধ্যমে আপনি আপনাকে কতটা আকর্ষণীয় করে তুলবেন অন্যদের কাছে। কমিউনিকেশন দক্ষতায় দক্ষ হতে হলে আপনাকে নি¤েœাক্ত বিষয়গুলো চর্চা করতে হবে। যেমন- আপনার সাধারণ জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করবেন সব সময়। আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে এবং বাচনভঙ্গির উন্নতি সাধন করার চেষ্টা করবেন। বাচনভঙ্গির উন্নয়নের জন্য উপস্থিত বক্তৃতা বা বিতর্ক প্রাতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা উচিত নিয়মিতভাবে। এমনকি বন্ধু-বান্ধব মিলে এই কাজটি করতে পারেন নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য।
পোষাক-পরিচ্ছদের ব্যপারে যতœবান হউন এবং যা আপনাকে মানায় এবং অন্যরা পছন্দ করে তা পরিধান করুন। আপনার বিভিন্ন মুদ্রাদোষ পরিহার করুন এবং হাতের নখ, চুলের খুশকি এবং অন্যান্য রোগ-জীবাণু সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। আয়নার সামনে অথবা বন্ধুদের সাথে কথা বলা চর্চা করুন এবং আঞ্চলিকতা যতটা পারুন পরিহার করুন।
ব্যবস্থাপনা দক্ষতা: আপনার ক্যারিয়ারকে সুন্দর করতে ব্যবস্থাপনা দক্ষতায় আপনার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। ব্যবস্থাপনা দক্ষতায় আপনি দক্ষতা দেখাতে পারলে আপনি সহজে অন্যদের চোখে পড়বেন এবং আপনি ধীরে ধীরে ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছাতে পারবেন। ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আপনাকে যা করতে হবে, তা হল:
আপনাকে নেতৃত্বের গুণাবলী চর্চা করতে হবে। নেতা ভাবলেই নেতা হওয়া যায় না। তবে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে এবং নেতৃত্ব দেবার মানসিকতা থাকতে হবে। যে কোন কাজ হাতে নিলে তা সুন্দরভাবে শেষ করার মানসিকতা থাকতে হবে। মাঝ পথে কোন কাজ যদি কঠিন মনে করে ছেড়ে দেন, তাহলে বুঝবেন আপনার মধ্যে ব্যবস্থাপনা দক্ষতার অভাব রয়েছে। কোন কাজ কঠিন মনে হলে চিন্তা করে বের করবেন কিভাবে তা অন্য উপায়ে সম্পন্ন করা যায়। কারা আপনাকে এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারে ইত্যাদি। ব্যবস্থাপনা দক্ষতার অন্যতম একটি প্রধান বিষয় হল সময় ব্যবস্থাপনা। এর পাশাপাশি মানুষের বিশ্বাস অর্জন করাও একটি ব্যবস্থাপনা দক্ষতা। আপনার সৌজন্যবোধ আপনাকে বিশ্বাস অর্জনে সহায়তা করবে। ভুল থেকে সঠিকটা শিক্ষা নেবার দক্ষতা থাকতে হবে। তার সাথে সাথে হাস্যরস বোধ আপনাকে একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক হিসেবে প্রাতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।
আইটি দক্ষতা: বর্তমান সময় আপনি যদি কম্পিউটার না জানেন, তাহলে আপনাকে শিক্ষিত বলা যাবে না। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। আবার তার মানে আপনি কম্পিউটারে উচ্চশিক্ষিত হবেন তা নয়। আইটি দক্ষতা বলতে বোঝায় কম্পিউটার ব্যবহার করে চিঠি বা কোন ডকুমেন্ট লিখতে, সুন্দরভাবে প্রিন্ট করা জানতে হবে। জানতে হবে কীভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করে আপনি ডাটা ম্যানেজমেন্ট করতে পারেন। কম্পিউটার ব্যবহার করে কীভাবে একটি প্রেজেন্টেশন করতে পারেন। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারও ভালভাবে জানতে হবে। এর পাশাপাশি যদি কম্পিউটার এর হার্ডওয়্যার ও মেইনট্যানেন্স জানা থাকে তবে আপনি আইটি দক্ষতার প্রাধান ধাপগুলো পূর্ণ করবেন।
সর্বশেষ বলা যায়, ক্যারিয়ার পরিকল্পনার জন্য আপনি ওপরে উল্লিখিত দক্ষতাগুলোর যতগুরো আয়ত্ত করতে পারবেন, আপনার সম্ভাবনা ততই উজ্জল হবে।
সমন্বয়:
ক্যারিয়ারে চাকরি নিয়ে হতাশায় থাকেন অনেকেই। মনের মতো চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার সাথে আপনার শিক্ষাজীবনের সার্টিফিকেটগুলোর মিল রয়েছে কি না দেখুন। শিক্ষা থেকে শুরু করে অভিজ্ঞতার তালিকা করে দেখুন, সেখানে আর কিসের অভাব রয়েছে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: বর্তমান যুগে ভালো চাকরির জন্য ন্যূনতম ব্যাচেলর ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। তার সাথে পছন্দের কাজের ক্ষেত্রে যদি এক বা দুই বছরের কোনো কোর্সের সার্টিফিকেট যোগ করতে পারেন, তাহলে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এগিয়ে থাকতে পারবেন অনায়াসে। এজন্য ছাত্র জীবনে অর্নাস/ডিগ্রিী কোর্সর পাশাপাশি কম্পিউটার বেসিক কোর্স এবং ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ কোর্স সম্পন্ন করা জরুরী। তবে একথা ভুলে গেলে চলবে না চাকুরীর বাজারে যতই দুর্ভিক্ষ থাকুক না কেন আপনি যদি দক্ষ হন, আপনার যদি যোগ্যতা থাকে তবে চাকুরী নামের সোনার হরিণটি অবশ্য আপনার কাছে ধরা দিবে ।
অভিজ্ঞতা: যদি কলেজে পড়া অবস্থায় পছন্দের ক্ষেত্রে পার্ট টাইম চাকরি করেন, তবে শিক্ষাজীবন শেষে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ভালো চাকরি পাওয়া সহজ হবে। তা ছাড়া ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগাতে পারেন।
ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সক্রিয়তা: আধুনিক যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চাকরি পাওয়ার বড় ক্ষেত্র। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু সময় দিন। অনেকের খোঁজ সহজে পাবেন এবং পরামর্শও মিলবে। কিন্তু সাবধান সোশাল মিডিয়া যেন আপনাকে পেয়ে না বসে। আপনি যেন ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বাসিন্দা না হন।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে: দ্রæত সিদ্ধান্ত নিন। ‘দ্য সুনার, দ্য বেটার’ কথাটি মেনে চলুন। নিজের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না। ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শিখুন। সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অন্যের কাছে হাত পাতবেন না। তবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বেলায় বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীর পরামর্শ নিন। পারিবারিক সিদ্ধান্ত নিতে সব সদস্যের মতামতকে গুরুত্ব দিন। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেলে তার ভালো-মন্দের হিসাব কষতে উঠে পড়ে লাগবেন না। এবার মাঠে নামুন। নিজেকে প্রাস্তুত করে আপনার মনের মতো প্রাতিষ্ঠানে ঢুঁ মারুন, চাকরি পেয়ে যাবেন। মনে রাখবেন, স্কুলপড়ুয়া কিশোর থেকে শুরু করে অবসর নেওয়া প্রবীণ ব্যক্তিও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে থাকেন। একটা ভালো সিদ্ধান্ত জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। আবার ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে সারা জীবনের কান্না। সিদ্ধান্ত নিতে তাই সিদ্ধহস্ত হতে হবে। সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকা চলবে না যতই বাধা আসুক সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সিদ্ধান্তে অটল থাকলে সাফল্য অবশ্যই একদিন আসবে। লেখক: সহকারী পরিচালক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সাতক্ষীরা।